Wednesday, December 4, 2013

"সংস্কৃতিবিহীন রাজনীতি আর মস্তিস্কবিহীন মাথা"

                                         "সংস্কৃতিবিহীন রাজনীতি আর  মস্তিস্কবিহীন মাথা"

                                           ------------মিজানুর ভূঁইয়া

       যতই ভাবি রাজনৈতিক এই নোংরা ঘোলাজলের সাথে নিজেকে জড়াবোনা বা এ বিষয়ে কোনো কথাই বলবোনা, তবুও নিজের অজান্তেই মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা সুপ্ত সেই দায়িত্ববোধ আমাকে বার বার নাড়া দিয়ে যায়; যখনই দেখি দেশ ও জনতা এক চরম ভয়াবহতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। দেশের নাগরিকগণ একটি চরম সংঘাতময় অবস্থায় নিপতিত হচ্ছে এবং এর জন্য নাগরিককূল মোটেও দায়ী নয়; বরং কতিপয় স্বার্থান্নেশী লোভী মানুষেরা এর জন্য দায়ী, আর নিরীহ জনগণ সেই চক্রান্তের শিকার; তখন একজন জন্মসূত্রে দেশের নাগরিক হিসাবে আমার সচেতন বিবেক আমাকে চুপ করে থাকতে দেয়না এবং কিছু বলার জন্য সর্বদাই তাগিত দিতে থাকে।

     একটি দেশের স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও, যদি সেই দেশের মানুষকে এই ধরনের জঘন্যতম মানুষিক বিকৃতি সম্পন্ন পরিস্থিতির শিকার হতে হয় এবং প্রতিনিয়ত একটি অনিশ্চিত বিপদজনক অবস্থায় আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে জীবন কাটাতে হয়, তবে বলতেই হবে যে, সেই দেশের রাজনীতি, সভ্যতা ও সংস্কৃতি আদৌ গড়ে উঠেনী অথবা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।আসলে তাই যদি হয়! তাহলে আমরা কিভাবে সেই বিদেশী বেনিয়াদের সাথে যুদ্ধ করলাম এবং আমাদের স্বাধীনতা ও সংস্কৃতির অধিকার কেড়ে নিলাম। নিশ্চয় আমাদের মাঝে সেই সচেতনতাবোধ ছিলো, আর সে জন্যই আমরা আমাদের প্রাণ বিসর্জন দিতেও দ্বিধাবোধ করিনি। তবে আসল সংকটটি কোথায়?এই সহজ প্রশ্নটির উত্তর কে দিবে? দেশের আপামর জনতা! নাকি স্বাধীনতার লগ্ন থেকে আজ অবদি যারা পালাক্রমে রাষ্ট্র শাসন করেছেন তারা?
 একটি গণতান্ত্রিক আধুনিক সুশীল সামাজিক জীবন ব্যবস্থায় এধরনের বর্বরতাকে কখনো সমর্থন করেনা, আর সে ধরনের জীবন ব্যবস্থা কখনো কাম্য হতে পারেনা। এতো রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা, এর  লক্ষ্য ছিলো একটি গণতান্ত্রিক মুল্যবোধ সম্পন্ন একটি সুন্দর জীবন ব্যবস্থাকে সাধারণ মানুষের জন্য নিশ্চিত করা। কিন্তু আমরা এসব কি দেখছি? গণতন্ত্র রক্ষার নামে মিথ্যা গণতন্ত্রের খোলস পরা কতিপয় ব্যক্তি রাজনৈতিক ফায়দা অর্জন করার জন্য নিরীহ সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবনকে জিম্মি করে তাদের মসনদ রক্ষার অথবা মসনদ অর্জনের বলি হিসাবে ব্যাবহার করছে।নিরীহ মানুষের জীবন কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংসের বিনিময়ে হলেও তাদের ক্ষমতা অধিগ্রহণ চাই, আর অন্যদিকে প্রতিদিন শত শত নিরীহ মানুষ বিনাকারণে তাদের জীবন দিচ্ছে আর হাজার হাজার কোটি টাকার যানবাহন ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি জ্বলে পুড়ে ছাঁই হচ্ছে।

      এসবের জন্য কি আমাদের দেশের এক শ্রেনীর অসৎ রাজনৈতিক মতলববাজীরা দায়ী নয়? এইসব অযোগ্য ও অপরিপক্ষ মতলববাজীদের বাজিকরী খেলায় সমগ্র দেশ আজ সম্পূর্ণভাবে এবং অত্যন্ত নিশ্চিতভাবে একটি ধ্বংশপূরীতে পরিনত হতে যাচ্ছে। আর অন্যদিকে রাজনৈতিক খায়েশ পূরণের জন্য যেসব নাগরিকদেরকে এই ধ্বংশলীলা সংঘটিত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় আইন কানুন ভঙ্গ করার সাহস যোগানো হচ্ছে এবং মানুষের প্রতি মানুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে নির্মূল করা হচ্ছে, এইসব আচরগুলো কি প্রতিনিয়ত স্বাভাবিক জীবনকে হুমকির সম্মুখে দাড় করাচ্ছেনা? এতে কি আমাদের মানবতা, সভ্যতা, সংস্কৃতির অস্তিত্ব ক্রমাগত বিলীনতারদিকে যাচ্ছেনা?

      এইসব মৌলিক চিন্তাধারাগুলোর ব্যপারে কি আদৌ আমাদের সচেতন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গেরা আমল দিচ্ছেন! নাকি সবই সমূলে তিনারা ভুলে গিয়েছেন; তা আমাদের আজ আবার নতুন করে জেনে নিতে হবে।যে রাজনীতি এই ধরনের অসুস্থ্য চিন্তা শক্তি ধারণ করে সে রাজনীতি কখনো রাষ্ট্র এবং নাগরিকের মঙ্গল কামনা করেনা, শুধু নিজেদের মসনদ আরোহনই তাদের একমাত্র অভিষ্ট লক্ষ্য। আর তাই তারা সবসময় রাষ্ট্রের একশ্রেনীর নাগরিকদেরকে তাদের সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে ডাল-তলওয়ার হিসাবে ব্যবহার করে থাকেন। রাজনৈতিতে এই অনাচার,বিশৃঙ্খলতা ও নৈতিকতাহীনতার কারণে রাষ্ট্রের মেধাবী নাগরিকগণ রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় নিয়েছেন আর সেই সুযোগে মেধাহীন দুষ্টচক্র রাজনীতিতে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে।

          গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজ ব্যবস্থায় কখনো এই ধরনের অনাচার এবং নীতিবিবর্জিত সংস্কৃতিবিহীন রাজনীতি সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারেনা। একটি রাষ্ট্রের শুধু মাএ রজনৈতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায কখনই জনগনের জানমালের সম্পূর্ন নিরাপত্তা দিতে পারেনা, যদি সেই রাজনীতিতে শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চা না থাকে। আমাদের দেশের রাজনীতিআজ একান্তই সংস্কৃতিবিহীন হয়ে পড়েছে, আর তাই এর ক্ষমতা আরোহন ছাড়া নিদৃষ্ট জনকল্যাণমূলক কোনো অভিলক্ষ্য নেই। দেশের সমগ্র রাজনৈতিক অঙ্গনে যেভাবে নৃশংসতা ও বর্বরতা প্রবেশ করেছে, এতে দেশের ভবিষ্যৎ খুবই ভয়াবহ ও বিপদসঙ্কুল অবস্থার দিকেই ধাবিত হচ্ছে বলে মনে হয়।দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় দেশপ্রেমিক মেধাবী জনগণকেই দেশ রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে; নতুবা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ত, গণতন্ত্র, সুস্থ্য রাজনৈতিক চর্চা, সুশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিতান্তই ধ্বংসের মুখে নিপতিত হবে। একটি দেশ পরিচালনার জন্য যেমন রাজনৈতিক চর্চা দরকার আর তেমনি রাজনীতিকে সুন্দর, সুশীল এবং যুগোপযোগী মানুষের জন্য কল্যাণময় করে তোলার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চা অবধারিত। রাজনীতি রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থাকে দেখাশুনা করার কাজে ব্যবহারিত হয় , আর সংস্কৃতি রাষ্ট্রের জনগণ ও শাসক শ্রেনীর দৈনন্দিন আচার আচরণকে সুশীল ও সাবলীল করতে সাহায্য করে থাকে।

       রাজনীতি যখন হয় সংস্কৃতি চর্চাবিহীন আর তখনই সমস্থ বিপর্যয় নেমে আসে, শুরু হয় হিংসা, বিদ্ধেষ , হানাহানি, লুটতরাজ এবং শুরু হয়ে যায় বলপ্রয়োগের রাজনীতি।রাজনীতি যদি শুধু ক্ষমতা আরোহনের নিমিত্তে ব্যবহারিত হয় তবে সেই রাজনীতি কখনো জনকল্যাণমূলক হতে পারেনা,  তা হয়ে যায় সংস্কৃতি বিবর্জিত আর তখন সেই রাজনীতিতে থাকেনা কোনো দেশপ্রেম, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, নৈতিকতা, নাগরিক দায়ীত্ববোধ, আত্মত্যাগ, পরমত সহিষ্ণুতা, আর সেই রাজনীতিকে শুধু তুলনা করাযায় " মস্তকবিহীন মাথা আর সংস্কৃতিবিহীন রাজনীতি" সাথে। 
========================
নভেম্বর-০৩,২০,১৩
ভার্জিনিয়া, ইউ, এস, এ

No comments:

Post a Comment