ছোট বেলায় একটি প্রবাদ বাক্য শুনে থকতাম যে, "কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হও" এই বাক্যটির মর্মার্থ হলো এই যে, যদি তুমি কোনো কিছুতে ভালো ফল পেতে চাও; তবে, কথা যা বলবে তা কাজে পরিনত কর বা কথা কম বলে নিরবে কাজ করে যাও এবং যার ফল তুমি একমাত্র কাজের পরিণতির মাধ্যমেই পাবে।
এই বিষয়টি এখানে উল্লেখ করার বিশেষ কারণ এই যে,অপ্রয়োজনীয় অথবা অতিরিক্ত কথা বলার ব্যমো আজ
একটি বিশাল সামাজিক ও জাতীয় ব্যধীতে পরিনত হয়েছে। মানুষ আজকাল কারণে, অকারণে, যেখানে সেখানে
নিজেদের দায়ীত্বের আওতার বাইরেও কথা বলে অযাচিত সমস্যার সৃষ্টি করে।যা কিনা প্রকৃতার্থে, যে কোনো
একটি শান্তিশীল পরিস্থিথিকে চরম ঘোলাটে এবং আরো ব্যপক জটিল করে তোলে।
আজকাল মানুষ আরেকটি কথাসচরাচর বলে থাকে, কথা বলার স্বাধীনতা সবারই আছে।এই
স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে, একজন লোক যা খুশি তা বলবে এবং তার সংলিষ্ট দায়িত্বের বাইরেও তাকে কথা বলতে হবে,অথবা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন বিষয়েও নাক গলাতে হবে অথবা দায়িত্বহীনতাকে
এড়িয়ে যাওয়ার জন্য দায়িত্বহীনভাবে অর্থহীন কথা বলবে, যা কিনা কখনো কোনো প্রকার দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করেনা।আর এই ধরনের অর্থহীন কথার ফুল ফোটাবার প্রচেষ্টাগুলো সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে
প্রকৃতার্থে সুফল আনার চেয়ে অনেকাংশে চরম বিপর্যয়ই বয়ে নিয়ে আসে।
আরেকটি প্রবাদ বাক্য শুনেছি যে, "উনু কলসের পানি বেশী নড়ে" এর অর্থ হলো, কলসীতে যখন কম
পানি থাকে, তখন সানাম্য ঝাকিতেই কলসীর পানি এদিক সেদিক নড়াচড়া করে।আমাদের অতিরিক্ত কথা বলার সেটাই সম্ভবতো মূল কারণ, শিক্ষা ও দক্ষতা আর যাই থাকুকনা কেনো, কথা বলায় আমরা পিছিয়ে
থাকতে চাইনা, কারণ কথা বলায় আমাদের চ্যাম্পিয়ন তো হতেই হবে, কারণ ভিতরে যে অন্তসার শূন্য।আর তাই নিজেদের অদক্ষতা ও অজ্ঞতাকে ডাকা দেয়ার জন্যই হয়তো অতিরিক্ত এবং অনাহুত কথা বলা।আর
তারই ফলশ্রুতিতে, এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে আমাদের জাতীয় সকল প্রতিষ্টানগুলোতে এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে
চরম দুর্দশা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
যেহেতু সঠিক কাজ করার মতো দক্ষ লোকবল সঠিক মর্যাদা এবং মূল্যায়ন পাচ্ছেনা; আর তাই সমস্ত দপ্তরগুলোই আস্তে আস্তে সুবিদাভুগী ও অদক্ষ লোকেদের হাতে চলে যাচ্ছে এবং এর কারণ সরূপ জাতীয় উন্নয়ন ক্রমাগত বিপর্যস্ততার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কথা বলার এই কঠিন ব্যমোতে সব চেয়ে বেশী আক্রান্ত আমাদের
দেশের কতিপয় রাজনীতিবিদগণ এবং বুদ্ধিজীবিগন।রাজনীতিবিদের রাষ্ট্র পরিচালনায় অদক্ষতা ও
অদুরদর্শিতার ফলশ্রুতিতে বার বার নাগরিক জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে বিপর্যস্ততা নেমে আসছে আর সেই সুবাদে আমাদের দেশের কতিপয় সুবিদাবাদী ও নামধারী বুদ্ধিজীবিরা সুযোগ সুবিদা বুঝে এবং বুঝে, না
বুঝে, বাস্তবতা বর্জিত এবং নিজের মন গড়া ফর্মুলা পেশ করায় লেগে পড়েন। তারা যখন এইসব উপদেশগুলো
জাতির উদ্দেশে পেশ করে থাকেন, একবার ও কি ভেবে দেখেন যে, তাদের এই ফর্মুলা বা উপদেশগুলো আসলে
কতটুকু বাস্তবতা সম্পূর্ণ বা জাতীয় জীবনে এই সকল অর্থহীন এবং পক্ষপাতদুষ্ট উপদেশকতটুকু সহায়ক
ভুমিকা পালন করতে সক্ষম।
বা গোষ্টির প্রতিনিধিকে, কথা বলা এবং বাজ্যিক প্রকাশে আরোবেশি সংবেদনশীল, পরিমার্জিত ও পরিশীল হতে হয়।
কারণ তার সৎ বাক্য এবং সৎ আচরণের মাধমেই সেইজাতীর বা গোষ্টির প্রকৃত প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে। আমাদের দেশের
বাইরে, পৃথিবীর সকল উন্নত দেশের মানুষ ঘরে, বাইরে এবং কাজে যতটা নিরিবিলি এবং সংবেদনশীলতার পরিচয়
দেয়। আমরা জাতী হিসাবে ঠিক তার উল্টো, আমরা ঘরে, বাইরে, কাজে, মাঠে, হাটে যতটুকু উচ্চ স্বরে বং অনাহুত কথা
বলি, এমন কাজটি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে সচরাচর দেখা যায়। কারণ তারা কথা কম বলে এবং কাজ বেশি করে।
কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আজকাল অনাহুতই যেখানে সেখানে নিজেদের মুন্সিয়ানা জাহির করার জন্য অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে ঝুট ঝামেলা সৃষ্টি করছেন। যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন,
যদিও সেই বিষয়টি, সেই বিবৃতি দাতা ব্যক্তিটির সংলিষ্ট দপ্তর নয় বা সেই বিষয়ে হয়তো তার নিজেরও কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই, কিন্তু তবুও তাকে কিছু একটা বলতে হবে, কারণ তিনিতো রাষ্ট্রের কর্তা। আর
এভাবেই সকল সমস্যার বা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের ভাবমূর্তি
নষ্ট হচ্ছে।আসলে যতদিন পর্যন্ত আমরা সেই প্রবাদ বাক্যটি "কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হও" অনুসরণ বা যথাযত মূল্যায়ন করব, ততদিন জাতী হিসাবে আমাদের এভাবেই সমুদ্রের গভীর জলে সাঁতরাতে হবে।
------------------------------
মিজানুর ভুইয়ান
ভার্জিনিয়া, ইউ, এস, এ
No comments:
Post a Comment