Friday, April 11, 2014

"স্বপ্ন ডুবি"

অতিসম্প্রতি আমার এক সাম্পর্কিক ভাগিনা আলাউদ্দিন ও তার সদ্যবিবাহিত স্ত্রী
লিমার আমেরিকা যাত্রাপূর্ব কাপ্তাই হ্রদে মধুচন্দ্রিমা অবগাহনকালে অকস্মাৎ
এক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে নৌকা ডুবিতে অকাল মৃত্যু বরণ করে.
তাদের অমর স্মৃতির প্রতি আমার এই লেখাটি উৎসর্গীত হলো....

"স্বপ্ন ডুবি"
মিজানুর ভূঁইয়া

তোকে দেখেছি সেই ছোট্রটি
হেটে যেতি নিরবে পাশ ঘেষে
দুই একটি আধভাঙ্গা শব্দ
আর লাজুক লাজুক মুখ
দ্রুত ছুটে যেতি সন্মুখ থেকে
পাছে কেউ তোকে ফের
জিগ্যেস করে কিছু একটা।
সেই তুই; অনেক বড় হয়েছিস
আমার এই দীর্ঘ প্রবাস জীবনের ফাঁকে।
জানলাম; তুই সত্যিই বড় হয়েছিস
যখন শুনলাম তুই আমেরিকায় আসছিস।
একদিন তুই সত্যি সত্যিই
এসে হাজির হলি আমার সামনে!
আমার ঘরে; আমি অবাক বিস্ময়ে 
অবলোকন করলাম!
তোর বেড়ে উঠা পরিপূর্ণ যুবক
আকৃতির দেহটি, এ যে এক শক্তিমান
পুর্নাঙ্গ মানব দাড়িয়ে আমার সামনে! 
শুরু হলো তোর প্রবাস জীবন
চোখে নিয়ে হাজারো নতুন স্বপ্ন
যেভাবে প্রতিটি যুবক বুকে লালন
করে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রত্যাশায়।
চোখে মুখে ও বুকে সেই সোনালী
স্বপ্নকে ধারক করে সাজিয়েছিলি
একটি সুখের নীড় বাঁধার প্রত্যয়ে।
মাত্র বছর খানেক আগে জীবন সন্ধিতে
আবদ্ধ হলি লিমার সাথে, পেলি নতুন বউ।
কিন্তু সময় স্বল্পতায় তাড়াহুড়া করে
তোকে ফিরে আসতে হলো কর্ম রক্ষায়।
ইতিমধ্যে, বউকে আমেরিকাতে নিয়ে আসার
জন্য জুটে গেলো ভিসা, চোখের স্বপ্নগুলো 
পরিনত হলো বাস্তবতায়, জীবনের উঁকি দেওয়া
সমস্ত স্বপ্ন ও প্রত্যাশাগুলো আজ একে একে
ভোগ করার যে নিবিষ্ট লক্ষ্য,
তা ছিলো শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
কিন্তু জীবনের রূঢ় বাস্তবতাই থমকে দিলো সবকিছু!!! 
একটি হঠাৎ বয়ে যাওয়া সর্বনাশা ঝড়ো হাওয়া
ডুবিয়ে দিলো জীবনের সকল স্বপ্ন অসীমতলে।
নিজ দেশ ত্যাগের পূর্বে স্বাদ ছিলো তোর
নতুন বউকে নিয়ে শেষবারের মতো
স্বদেশীয় প্রকৃতির সুন্দর্য্য দর্শন ও মধুচন্দ্রিমায়
অবগাহন করা; আর তাই  নিজের মেয়ে সাতার না
জানার কারণে; তোর শাশুড়ির কিঞ্চিত আপত্তি
কিংবা কাপ্তাই হ্রদের মাঝির বৈরী আবহাওয়ার
কারণে সতর্কবাণী ও অনাগ্রহতাও
পারেনি তোর প্রচন্ড ইচ্ছাকে অবদমিত করতে।
নিয়তির পরিণতিই হয়তো তোকে টেনে নিয়েছে
সেদিনের সেই কাপ্তাই হ্রদের নৌকা ভ্রমনে।
হয়তো; তখনও তোর মাথায় আসেনি মহান ঈশ্বর
তার সৃষ্টিকে ভালবাসেন বলেই; তাদের রক্ষা কল্পে 
আপদে-বিপদে বিভিন্ন মাধ্যমে পূর্ব সতর্কতা হিসাবে 
সাংকেতিক সতর্ক সংকেত জীবের মাঝে পৌছে দেন।  
আমরা কখনো তা গ্রাহ্য করি; আবার কখনো করিনা,
তোর শাশুড়ির সেই আপত্তি কিংবা সেইদিনের
সেই ঘাটের মাঝিদের সতর্কবাণীই হয়তো;
তোর জন্য ঐশ্বরিক সতর্ক সংকেত ছিলো!
রূপকথায় আছে; প্রেমের মরা জলে ডুবেনা
সেই দ্রুব সত্যটি নিজের জীবন দিয়ে
করে গেলি রচনা, ইচ্ছে করলে তুই স্বার্থপরের
মতো নিজের জীবনকে হয়তো পারতি বাচাতে!
কিন্তু যার সাথে জীবন সন্ধিতে আবদ্ধ
তাকে ছেড়েতো জীবন হয়না; আর তাই
প্রাণপণ চেষ্টা করেও যখন শেষ রক্ষা হলোনা
অবশেষে সহমরণে দিয়ে দিলি আপন জীবনটিও।  
যে সুখের নীড় তুই বাধার স্বপ্ন ছিলো এই ভুবনে 
সেই সুখের নীড় তুই অবশেষে বাঁধলী পরপারে।
তোর এই অকৃত্তিম ভালবাসার জ্বলন্ত উদাহরণ 
রূপকথার সেই ভালবাসার সকল নজিরকেও
আজ হার মানালো; কি অদ্ভুত আত্মত্যাগ,
ভালবাসায় কি অপূর্ব বিসর্জন, আমৃত্যু জড়িয়ে
একে অপরকে কাপ্তাই হ্রদের সেই নীল জলে
ভাসতে ভাসতে পৃথিবীকে তোরা দু'জন শিখিয়ে গেলি
আত্মদানের মহান দৃষ্টান্ত; প্রানের মানুষটির জন্য।    
আমেরিকাতে নতুন বউকে নিয়ে যে স্বপ্ন নীড়ের
প্রত্যাশা ছিলো তোর; চোখে নিয়ে রংধনুর সাত রং 
সেই স্বপ্ন ডুবি হলো আজ কাপ্তাই হ্রদের জলে
কি অদ্ভুত নিয়তি; কি অদ্ভুত এই ভুবন রহস্য।
=============================
রচনা: এপ্রিল ০৭ ২০১৪
ভার্জিনিয়া, ইউ এস এ 

No comments:

Post a Comment