Wednesday, April 30, 2014

"বর্ষার দিনে"

"বর্ষার দিনে"
 মিজানুর ভূঁইয়া
 
বৃষ্টি ঝরা এই বিরামহীন বর্ষার মাঝে
মন বসেনা গদবাধা কোনো কাজে।
মন শুধু চায়; থাকি ঘরের দেয়ায় বসে
এক পলকে তাকিয়ে থাকি সঙ্গী নিয়ে পাশে।    
সাজিয়ে নেই ময়ুর পেখম সাজে
দেহখানা ভিজিয়ে নেই বৃষ্টি ধারার মাঝে।
ক্ষণে ক্ষণে চলে যায় মন নস্টালজিয়ার ভিড়ে
এই দেহ-মন ভীষণ আলসেমিতে যায় ভরে।
মন চায় একদম ঘুমিয়ে থাকি নকশী কাথা মুড়ে
এমনিতর হাজার ভাবনা আসে সারা মন জুড়ে।
বৃষ্টিধারার মিষ্টি সুরে মন হারিয়ে যায় ঐ সুদূরে
যেখানে কাটিয়েছি শৈশব মোর মেঘ ও রৌদ্দুরে।
মন চায়: চলে যাই প্রবাসের এই যান্ত্রিকতা ছেড়ে
সেই মোর ছোট গা'য়ে; যেখানে উঠেছি বেড়ে।
সময়ের হাওয়ায় সেসব আজ লেখা রয় স্মৃতি হয়ে   
জীবন নৌকা চলতে চলতে সময় যায় বয়ে
ভিজে বর্ষার ভাবনায় মন নিয়ে যায় অনেক দুরে।
==============================
রচনা: ৩০ এপ্রিল ২০১৪
ভার্জিনিয়া, ইউ এস এ
লেখকের একক সত্বাধিকার সংরক্ষিত    

Tuesday, April 29, 2014

"খোলস"

"খোলস"
মিজানুর ভূঁইয়া
 
মানুষ আমরা আত্মতুষ্টি ও আত্মখ্যাতির জন্য ব্যস্ত
অপরের জন্য করিনা আমরা সামান্যতম সময় ন্যস্ত।  
নিজেকে নিয়ে যতটুকু মত্ত, পরের জন্য হই বিরক্ত
আপন স্বার্থের ঝুলিতে ভরি চারিদিকে যতো মিলে সমস্ত।
নিজের তরে নিজে আমরা, বাড়াই শুধু নিজের ভূড়ি
পরের বেলায় শুধুই আমরা কথার মালা ছুড়ি।
রং ফানুসে মত্ত হয়ে উড়াই শখের রঙিন ঘুড়ি
পরের ঘুড়ি কেটে দিয়ে মারি ভীষণ তুড়ি।
আসলে মানুষ নামের আজব এক খোলস পরে আমরা
কতো রং বেরঙ্গের বড়াই করি।
=================
রচনা: এপ্রিল ২৯ ২০১৪
ভার্জিনিয়া, ইউ এস এ

Monday, April 28, 2014

"তারুণ্য"

"তারুণ্য"
মিজানুর ভূঁইয়া

তারুন্যের উচ্ছাসে ফুল ফোটে গাছে গাছে
পাখিরা গান গায়, পূব আকাশে সূর্য্য হাসে।
নতুন রঙ্গে প্রকৃতি সাজে, চোখে মুখে স্বপ্ন আসে
জীবনের প্রত্যাশা জাগে, ছুটে চলে দুর্গম পথে 
উল্কার বেগে, চোখে নিয়ে একরাস সোনালী স্বপ্ন।
দেহ মনে অদম্য শক্তি, যেনো আকাশ ছোয়ায় মুক্তি
সকল জীর্ণতাকে ছিন্ন করে তার দুর্দমনীয় শক্তি।
জীবনের উকি দেওয়া রঙিন স্বপ্নের জানালায় 
জেগে উঠে প্রত্যাশার লাল সূর্য্য এক নতুন আভায় 
তারুণ্যতা জীবনের অপূর্ব সুন্দর স্বপ্ন জায়গায়।   
বুকে লালিত প্রতিশ্রুতি চির বিজয়ের জন্য
নতুন জীবনের অন্নেষণে চিরবিজয়ী তারুণ্য।
=======================
রচনা: এপ্রিল ২৮ ২০১৪
ভার্জিনিয়া, ইউ এস এ
লেখকের একক সত্ব সংরক্ষিত

Friday, April 18, 2014

বেদনায় সিক্ত প্রতিদিন

বেদনায় সিক্ত প্রতিদিন

মিজানুর ভূঁইয়া  

একটি বেদনার বোঝা
এতো ভারী হতে পারে!
একটি চলে যাওয়া
এতো কষ্টের হতে পারে!
একটি না পাওয়া 
এতো কান্নার হতে পারে!
একটি অনুপস্থিতি
এতো শুন্যতা সৃষ্টি করতে পারে! 
একটি আকস্মিক বিদায়   
এতো হৃদয়বিদারক হতে পারে!
যা এর আগে এতোটুকু বুঝিনী,
তোমায় হারিয়ে আজ যতোটুকু বুঝিতেছি।
আজ আমি ঠিকই বুঝিতেছি মা;
তোমার অনুপস্থিতি সত্যিই অপূরণীয়
আর কোনো কিছুতে যা হয়না পূরণ। 
তোমার অকৃত্তিম আদর শাসন মায়া মমতা
জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে অত্যাবশ্বকীয়, এর
আগে তা এতোটা গভীরভাবে টের পাইনি।
আজ তোমায় না পওয়ার সেই অভাব;
যতোটা আমায় পলে পলে গ্রাস করছে
তোমার জীবদ্দশায় তা এতোটুকু বুঝিনি।  
একজন পথিকের ক্লান্ত অবসন্ন দেহ
যেমন খুঁজে বেড়ায় সুশীতল ছায়াতল। 
তেমনি সন্তানের তৃষ্ণার্ত হৃদয়;
খুঁজে বেড়ায় মায়ের আচঁলে ঢাকা প্রশান্তি।
সেই স্বস্হি্ ও প্রশান্তি কোথায় মিলবে এমন! 
আর তাইতো তোমায় খুঁজি ফুলের সৌরভে
হয়তোবা বাগানের হাজারো ফোটা ফুলের
কোনো একটি ফুল হয়ে ফুটে আছো তুমি।
খুঁজি তোমায় পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মাঝে
হয়তোবা তুমি আলো হয়ে ছড়িয়ে আছো।
আমি অধীর প্রতীক্ষায় খুজি তোমায়;
সুমুদ্রের হাজারো রাশি রাশি ঢেউয়ের মাঝে,
হয়তোবা তুমি কোনো একটি ঢেউ হয়ে
ভিড়বে তীরে, যেখানে আমি প্রতীক্ষায় রত।
আমি অঝোর বৃষ্টি ধারায় খুঁজি তোমায়,
বৃষ্টির ফোটা হয়ে তুমি আসবে ফিরে এই ধরায়
সেই আকূল অভিপ্রায়ে; ভিজিয়ে দিবে তৃষ্ণার্ত প্রাণ।    
তবুও কেনো পাইনা তোমায় অনন্ত অপেক্ষায়,
শুধু বেদনায় সিক্ত হয়, এই হৃদয় বারে বারে
অব্যক্ত কান্নায় ভিজে সারা মন; না দেখা যন্ত্রনায়।
========================
রচনা: ১৪ এপ্রিল ২০১৪
ভার্জিনিয়া, ইউ এস এ

Friday, April 11, 2014

"স্বপ্ন ডুবি"

অতিসম্প্রতি আমার এক সাম্পর্কিক ভাগিনা আলাউদ্দিন ও তার সদ্যবিবাহিত স্ত্রী
লিমার আমেরিকা যাত্রাপূর্ব কাপ্তাই হ্রদে মধুচন্দ্রিমা অবগাহনকালে অকস্মাৎ
এক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে নৌকা ডুবিতে অকাল মৃত্যু বরণ করে.
তাদের অমর স্মৃতির প্রতি আমার এই লেখাটি উৎসর্গীত হলো....

"স্বপ্ন ডুবি"
মিজানুর ভূঁইয়া

তোকে দেখেছি সেই ছোট্রটি
হেটে যেতি নিরবে পাশ ঘেষে
দুই একটি আধভাঙ্গা শব্দ
আর লাজুক লাজুক মুখ
দ্রুত ছুটে যেতি সন্মুখ থেকে
পাছে কেউ তোকে ফের
জিগ্যেস করে কিছু একটা।
সেই তুই; অনেক বড় হয়েছিস
আমার এই দীর্ঘ প্রবাস জীবনের ফাঁকে।
জানলাম; তুই সত্যিই বড় হয়েছিস
যখন শুনলাম তুই আমেরিকায় আসছিস।
একদিন তুই সত্যি সত্যিই
এসে হাজির হলি আমার সামনে!
আমার ঘরে; আমি অবাক বিস্ময়ে 
অবলোকন করলাম!
তোর বেড়ে উঠা পরিপূর্ণ যুবক
আকৃতির দেহটি, এ যে এক শক্তিমান
পুর্নাঙ্গ মানব দাড়িয়ে আমার সামনে! 
শুরু হলো তোর প্রবাস জীবন
চোখে নিয়ে হাজারো নতুন স্বপ্ন
যেভাবে প্রতিটি যুবক বুকে লালন
করে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রত্যাশায়।
চোখে মুখে ও বুকে সেই সোনালী
স্বপ্নকে ধারক করে সাজিয়েছিলি
একটি সুখের নীড় বাঁধার প্রত্যয়ে।
মাত্র বছর খানেক আগে জীবন সন্ধিতে
আবদ্ধ হলি লিমার সাথে, পেলি নতুন বউ।
কিন্তু সময় স্বল্পতায় তাড়াহুড়া করে
তোকে ফিরে আসতে হলো কর্ম রক্ষায়।
ইতিমধ্যে, বউকে আমেরিকাতে নিয়ে আসার
জন্য জুটে গেলো ভিসা, চোখের স্বপ্নগুলো 
পরিনত হলো বাস্তবতায়, জীবনের উঁকি দেওয়া
সমস্ত স্বপ্ন ও প্রত্যাশাগুলো আজ একে একে
ভোগ করার যে নিবিষ্ট লক্ষ্য,
তা ছিলো শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
কিন্তু জীবনের রূঢ় বাস্তবতাই থমকে দিলো সবকিছু!!! 
একটি হঠাৎ বয়ে যাওয়া সর্বনাশা ঝড়ো হাওয়া
ডুবিয়ে দিলো জীবনের সকল স্বপ্ন অসীমতলে।
নিজ দেশ ত্যাগের পূর্বে স্বাদ ছিলো তোর
নতুন বউকে নিয়ে শেষবারের মতো
স্বদেশীয় প্রকৃতির সুন্দর্য্য দর্শন ও মধুচন্দ্রিমায়
অবগাহন করা; আর তাই  নিজের মেয়ে সাতার না
জানার কারণে; তোর শাশুড়ির কিঞ্চিত আপত্তি
কিংবা কাপ্তাই হ্রদের মাঝির বৈরী আবহাওয়ার
কারণে সতর্কবাণী ও অনাগ্রহতাও
পারেনি তোর প্রচন্ড ইচ্ছাকে অবদমিত করতে।
নিয়তির পরিণতিই হয়তো তোকে টেনে নিয়েছে
সেদিনের সেই কাপ্তাই হ্রদের নৌকা ভ্রমনে।
হয়তো; তখনও তোর মাথায় আসেনি মহান ঈশ্বর
তার সৃষ্টিকে ভালবাসেন বলেই; তাদের রক্ষা কল্পে 
আপদে-বিপদে বিভিন্ন মাধ্যমে পূর্ব সতর্কতা হিসাবে 
সাংকেতিক সতর্ক সংকেত জীবের মাঝে পৌছে দেন।  
আমরা কখনো তা গ্রাহ্য করি; আবার কখনো করিনা,
তোর শাশুড়ির সেই আপত্তি কিংবা সেইদিনের
সেই ঘাটের মাঝিদের সতর্কবাণীই হয়তো;
তোর জন্য ঐশ্বরিক সতর্ক সংকেত ছিলো!
রূপকথায় আছে; প্রেমের মরা জলে ডুবেনা
সেই দ্রুব সত্যটি নিজের জীবন দিয়ে
করে গেলি রচনা, ইচ্ছে করলে তুই স্বার্থপরের
মতো নিজের জীবনকে হয়তো পারতি বাচাতে!
কিন্তু যার সাথে জীবন সন্ধিতে আবদ্ধ
তাকে ছেড়েতো জীবন হয়না; আর তাই
প্রাণপণ চেষ্টা করেও যখন শেষ রক্ষা হলোনা
অবশেষে সহমরণে দিয়ে দিলি আপন জীবনটিও।  
যে সুখের নীড় তুই বাধার স্বপ্ন ছিলো এই ভুবনে 
সেই সুখের নীড় তুই অবশেষে বাঁধলী পরপারে।
তোর এই অকৃত্তিম ভালবাসার জ্বলন্ত উদাহরণ 
রূপকথার সেই ভালবাসার সকল নজিরকেও
আজ হার মানালো; কি অদ্ভুত আত্মত্যাগ,
ভালবাসায় কি অপূর্ব বিসর্জন, আমৃত্যু জড়িয়ে
একে অপরকে কাপ্তাই হ্রদের সেই নীল জলে
ভাসতে ভাসতে পৃথিবীকে তোরা দু'জন শিখিয়ে গেলি
আত্মদানের মহান দৃষ্টান্ত; প্রানের মানুষটির জন্য।    
আমেরিকাতে নতুন বউকে নিয়ে যে স্বপ্ন নীড়ের
প্রত্যাশা ছিলো তোর; চোখে নিয়ে রংধনুর সাত রং 
সেই স্বপ্ন ডুবি হলো আজ কাপ্তাই হ্রদের জলে
কি অদ্ভুত নিয়তি; কি অদ্ভুত এই ভুবন রহস্য।
=============================
রচনা: এপ্রিল ০৭ ২০১৪
ভার্জিনিয়া, ইউ এস এ 

Monday, April 7, 2014

"আত্মহনন"

"আত্মহনন"

 মিজানুর ভূঁইয়া
 
ওলো সই,তুই এতোই বোকা;
পরের কথায় দিলি তোর পাকা ধানে মই।
যাদের কথায় করলি এমন সর্বনাশা কান্ড  
তাকিয়ে দেখ; সেই সাথীরা এখন গেলো কই?
বলেছিলেম; শুনলিনা মানা,
ঝরালি তোর সব সোনালী ফসলের দানা।
জীবন এখন তোর যন্ত্রনায় হলো ফানাফানা
লাভের আশায় হারালি তুই পুরো ষোল আনা। 
তুই করলি কেনো এমন ভুল,
ঝাকি দিয়ে ঝরালি আপন গাছের সব কুল
এখন শুদবি কেমনে, নিজের ভুলের সেই মাশুল।
তুই আপন গায়ে দিয়ে আগুন,
চেয়েছিলি আসবি নিয়ে সুখের ফাগুন
সেই আগুনে পুড়ে এবার জীবন খানখান
মতলবিরা সব ফুর্তি করে, বৈছে খুশির বান।
=========================
 রচনা:  এপ্রিল ০৭ ২০১৪
ভার্জিনিয়া, ইউ এস এ

Sunday, April 6, 2014

"দেমাগ"

"দেমাগ"

মিজানুর ভূঁইয়া
 
তোর ধনের দেমাগ
        জ্ঞানের দেমাগ
         রূপের দেমাগ,
দেমাগ ছাপ-কাপড়ে।
দেখাস তুই;
গায়ের জোরের দেমাগ,
দেমাগ; বংশ পরিচয়ের মাঝে।
অহংকারে বুকভরা তোর
সকাল বিকাল সাঝে।
ভুলে গেছিস ক্ষনিকের দুনিয়ায়
যা কিছু তোর, সবই হলো মিছে।  
মানুষ হয়ে মানুষের,
কি লাগিস তুই কাজে।
মানুষ নামের পেচা তুই
আসলে একদম বাজে।
দুই দিনের এই দুনিয়ায়
মরিস তুই দেমাগের বিষে।
তোর দেমাগ দেখে
গলে যায় লোহা এবং শীশে।
মরার পরে চলে যাবি
অন্ধকার কবরের মাঝে।
পচে-গলে যাবি একেবারে মাটিতে মিশে।
রাখবেনা কেউ শুইয়ে তোকে
হীরক কিংবা সোনা-রুপার খাজে।
মাটির মানুষ
শুইতে হবে মাটির বিছানায়
এই ছাড়া যে তোর আর অন্য উপায় নাই।
===========================
রচনা: এপ্রিল ০৬ ২০১৪
ভার্জিনিয়া, ইউ এস এ

Thursday, April 3, 2014

"বসন্ত তোমার শনে"

"বসন্ত তোমার সনে"
মিজানুর ভূঁইয়া

হে ফুল ফুটানো সুবাস ছড়ানো
চিরসুন্দর মন রাঙ্গানো বসন্ত। 
তুমি এসেও আসোনা দ্বারে,
চলে যাও বারে বারে।
এ কোন লুকুচুরি খেলা তোমার,
যাও একবার বলে যাও কানে কানে
ব্যাকুল প্রতীক্ষায় চেয়ে তোমার পানে।
ফুল ও পত্রকলীরা ফুটেও ফুটেনা
বসন্তরাজের দেখা যে মিলেনা।
প্রকৃতির এই বিরূপতার মাঝে
মন কি আর রঙ্গীনতায় সাজে।
এই ভর নিঃসঙ্গতায়,
আমি চলে যাবো তুমি যেথায়।
খুঁজে নিবো তোমার হরেক রকম রং
মেখে নিবো তা আমার রংবিহীন মনকোণে।
মিতালী করবো আমি আজ তোমার শনে,
তুমি আর আমি থাকবো বনে আর মনে।
===================
রচনা: এপ্রিল ০৪ ২০১৫
ভার্জিনিয়া, ইউ এস এ