Wednesday, May 17, 2017

"কেনো এই হিংসা দ্বেষ -কেনো এই ছদ্ববেশে"


"কেনো এই হিংসা দ্বেষ -কেনো এই ছদ্ববেশ"
মিজানুর ভূঁইয়া



পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা এবং ঈর্ষা এবং বিদ্বেষহীন জীবন দর্শন মনে হয় আমরা পাইনি জাতিগতভাবেই। সুদীর্ঘিকাল ধরেই আমরা এইসকল মানবিক গুণাবলীর বহির্ভুত জীবন যাপন করে আসছি। আমরা দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই থাকিনা কেন, আমরা আমাদের দেশাত্মবোধ সংস্কৃতি ও ধর্ম প্রেম যতই বেশি দেখাইনা কেন আর এসব কিছুর মূলেই রয়েছে মানব প্রেম পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সহমর্মিতাবোধ। আমরা একমাত্র সেই ক্ষেত্রে গিয়েই বারবার ফেল করি। আমরা কখনোই কারো ব্যক্তিগত কিংবা সামগ্রিক ভালো অর্জন এবং কর্মের স্বীকৃতি কখনোই দেইনা কারণ সেই ব্যাপারে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে একপ্রকার ঈর্ষাবোধ কিংবা হীনমন্যতায় আমরা সব সময়ই ভুগি।
আমাদের মাঝে অনেক ভাল কর্ম এবং ভাল অর্জন আছে যার যথাযত স্বীকৃতি এবং পৃষ্টপোষণের মাধ্যমে আমরা অনেক উন্নতি লাভ করা এবং সন্মান অর্জন করতে পারি কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় আমরা হিংসা বিদ্বেষবিহীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত নয় বলে; আমাদের সেই সম্ভাবনাগুলো ক্রমশই দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে।

নিজ দেশ থেকে এই দূর প্রবাসে যখন আমরা একটি সুন্দর নৈতিকতাবোধ সম্পূর্ণ এবং সামাজিক সুশৃঙ্খল একটি পরিবেশে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করছি কিন্তু অত্যান্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় এই যে; এমন একটি ভালো পরিবেশেও থেকেও আমরা আমাদের নিজেরা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া খারাপ কর্ম ও খারাপ চিন্তাগুলোকে বর্জন করে সুন্দরের পথে এগিয়ে যেতে পারছিনা।
সুদীর্ঘকাল ধরেই এই বৃহত্তর ওয়াশিংটন এলাকাতে বসবাস করছি এবং এখানে আমাদের বাংলাদেশী বাঙ্গালী সমাজের এই সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক অর্জন এবং উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এটি অত্যান্ত অনেক আনন্দের এবং গৌরবের কথা। কিন্তু এখনো পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার মতো এমন কোনো দৃষ্টান্তমূলক উদারতা আমাদের মাঝে তৈরি হয়নি একে অন্যের প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসে আমাদের জাতীয়তাবোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একে ওপরের পাশে এসে উদারভাবে সহযোগিতা করা। সবাই শুধুই চায়, যে যার জায়গায় সম্রাট হয়ে থাকতে আর অন্যের দিকে আঙ্গুল বুলিয়ে বুলিয়ে বড় বড় কথা বলতে।
 
বিগত কিছুদিন থেকে এমন কিছু অশোভন কথাবার্তা এবং প্রতিহিংসামূলক আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে যে; এতে মনে হয় এখানে যে কোনো একজন এবং যে কোনো একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর বাদবাকিরা না থাকলে খুবই ভাল হতো, তাহলেই আমার পৃথিবীতে আমিই মহারাজা হয়ে থাকতে পারতাম। আসলে এমনতর ভাব কেন? আমাদের এই এলাকাতে বিগত বছরগুলোতে বাঙ্গালী কমিউনিটিতে প্রচুর সংখ্যক লোকজন বেড়েছে, অনেকে মনে করেন ম্যারিল্যান্ড, ডিসি এবং ভার্জিনিয়া মিলে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার বাঙ্গালী অধিবাসী এখানে রয়েছে এবং এর সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যাবসা বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্টান, সাংস্কৃতিক সংঘটন ও বাড়তে পারে এতে দোষের কিইবা থাকতে পারে। ব্যাপক জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে লোক সংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতেই পারে; এতে করে সবার জন্যই পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে, এটাতো অনেক ভালো কথা। তাহলে এতো যুদ্ধ বিগ্রহ এবং বিদ্বেষ কেন? ভৌগোলিক দূরত্ব ও জনসংখ্যার পরিসংখ্যানে যেকেউ যে কোনো জায়গায় যে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে এতেতো কোনো আপত্তি বা বিপত্তি থাকার কথা নয়। সবাই তার নিজ যোগ্যতা এবং মেধা নিয়োগের মাধ্যমে যদি নিজের জন্য ও সমাজের আর আর সবার জন্য ভালো কিছু একটা করতে পারে তাতে সমাজ উপকৃত হবে, এতে আমি তেমন ক্ষতির বিষয়টি দেখছিনা ।

আমাদের এমন স্বভাব হয়েগেছে যে; আমি যা করবো অন্যে সেরকম কিছু করতে পারবেনা। অন্যদিকে কিছু কিছু লোক সব সময়ই নিজের অজ্ঞতা ও অযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সুবিধা ভোগের নিমিত্তে কিছু কিছু বিত্তশালী অথবা প্রতিষ্ঠিত লোকদের পিছে পিছে হেটে তাদের বিভ্রান্ত করার কাজে লিপ্ত থেকে নিজে সুবিধাটুকু আদায় করার কাজে সব সময়ই নিয়োজিত থাকে। আর এরফলে সেইসকল লোকজন সঠিক চিন্তা এবং সঠিক কাজটি না করে বিভ্রান্তির পথেই পা বাড়ায়। আবার এমন কিছু লোক আছে যারা নিজেকে অনেক জ্ঞানী, সুদক্ষ, পারদর্শী এবং সকল কাজের কাজী মনে করে আর সেক্ষেত্রে তারা একবার ক্ষমতার মধ্যে ঢুকে গেলে একেবারে মসনদ পেয়ে বসে। নিজের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়ু করার জন্য সামনে কিছু পুতুলরূপী মানুষকে সামনে রেখে পিছন থেকে সকল কলকব্জা ঘুরাতে থাকে আর নিজের ক্ষমতার স্বাধ গ্রহণ করে। এই ধরণের লোকজন সবসময়ই কিছুটা বিচক্ষণ এবং জ্ঞানী লোকদের দূরে রাখার চেষ্টা করে কারণ যেসকল লোকজন একটু আত্নসচেতন এবং বুদ্ধিমান এরা কাছে আসলে তাদের ক্ষমতার আয়ু হয়তো কমে যাবে সেই ভয়েই সবসময় ভীত থাকে। আবার অনেকেই নিজের অভিজ্ঞতা এবং পারদর্শিতা কতটুকু আছে সে বিষয়টি নিজ বিবেচনায় না এনে হঠাৎ করেই কিছু একটা করে রাতারাতি মহারতি বনে যেতে চান l সেটাও যেমন কাম্য নয় কারণ যে কোনো বিষয়ে প্রতিষ্ঠা এবং খ্যাতি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন সে বিষয়ে বিশদ অভিজ্ঞতা এনং পর্যাপ্ত জ্ঞান l

আসলে এই বিষয়ে একটি সুদীর্ঘ লেখা লিখবো বলে চিন্তা করেছিলাম কিন্তু আমি বুঝতে পারছি এতে করে আমার মতো একজন স্বল্পজ্ঞানীর জন্য অনেক বেশিই হয়ে যাবে এবং অপরদিকে পাঠকগণও বিরক্ত হয়ে যেতে পারেন। তাই উপসংহারে শুধু একথাই বলবো যে; আমাদের নিজ নিজ জীবনে আমরা অনেক ধৈর্যশীল, সততা, দূরদর্শী, সহনশীল, পারস্পরিক সহানুভুতিশি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠা অনেক জরুরি। আর তাতেই আমাদের সবার জীবনে যে অপার সুন্দর সম্ভাবনা রয়েছে তা সবার সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের নিজের পরিবার সমাজ এবং সর্বোপরি দেশের জন্য অনেক ভালো কিছু করার মতো সুযোগ সৃষ্টি করবে বলেই আমার বিশ্বাস। চলুন যে সেখানেই থাকুননা কেন আপনার জানামতে যদি এমন কোনো সুযোগ সুবিধা থাকে তা দিয়ে অন্যকে সহযোগিতা করা যায়, সেটা শিক্ষা, চাকুরী, প্রশিক্ষণ, ব্যবসা কিংবা এমন কিছু হতে পারে যার মাধ্যমে আপনার স্বজাতীয় স্বজন উপকৃত হতে পারে। আর নয়; কোনো হিংসা দ্বেষ -নয় কোনো ছদ্ববেশে" ছদ্ববেশীদের চিন্হিত করুন এবং দূরে থাকুন।

No comments:

Post a Comment