Thursday, November 24, 2016

"অমনিয়া ও শান্তির মশাল"

"অমনিয়া ও শান্তির মশাল"
মিজানুর ভূঁইয়া

উত্তপ্ত অশান্ত সিরিয়া জ্বলছে ধাউ ধাউ
সংকিত জীবন প্রতিদিনই মৃত্যু ধ্বংসযজ্ঞ।
জীবন সেখানে আঁধারে ঢেকে দিয়েছে
বেঁচে থাকার আশা শুধু মৃত্যু কূপে নিপতিত।
নারী শিশু বৃদ্ধ মানবিক মূল্যবোধ আজ ঘাতকের কোপানলে
স্বগোত্রে বর্বররিয় যুদ্ধ এ কোন তান্ডবীয় লীলা।
সভ্যতার সূর্যালোক লজ্জায় ডুবে গেছে
শান্তির আশা কালো অন্ধকারে পড়ে গেছে ঢাকা।
মানবিকতাবোধ পিচাশের অট্রহাসি আজ
প্রতিদিন অজস্র্র ধ্বংস আর মৃত্যুতে আনন্দ সেখানে।
তারই মাঝে শান্তির অগ্রদূত বিনিদ্রিত দিনরাত
ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় ঘৃণিত যুদ্ধের বিপক্ষে শান্তির মশাল হাতে।
বিপন্ন নিধনযজ্ঞে একটু আশার বাতি জ্বালাবার শেষ ইচ্ছে
পৈচাশিক বর্বরতায় সভ্যতার আলো যখন নিভু নিভু এই প্রান্তে
অমনিয়া জেগে উঠেছে; হাতে তার শান্তির আলোক  মশাল।
পেশায় হিসাব রক্ষক হয়েও গায়ে তুলে নিয়েছে  সেবিকার শুভ্র গাউইন।
মনে তার অধম্য সাহস দিনরাত খেটে চলেছে
যুদ্ধাহত ক্ষতবিক্ষত দেহগুলোকে প্রাণ ফিরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা।
প্রতিনিয়ত নিজ জীবন যখন মৃত্যু শঙ্কায় সংকিত
ভীত নয়; তবু আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে পথ চলা।
জীবনতো শুধু একটাই সুযোগও একবার
তবে কেন পিছু হটা; হয় মৃত্যু, নয় শান্তির পথে চলা। ।
_________________________________

২৪ নভেম্বর ২০১৬
ভার্জিনিয়া ইউ এস
   

Tuesday, November 22, 2016

"বিদায় প্রবীর দা"


" বিদায় প্রবীর দা"
মিজানুর ভূঁইয়া


চলেতো যাবেই
একদিন সবাইকেই চলে যেতে হবে। 
তবে এটা ভাবিনী তুমি
সবাইকে ছেড়ে এতো জলদি চলে যাবে। 
তোমার সাথে আমার শেষ দেখা
হয়েছিল নীলাচল দুর্গোউৎসবের অনুষ্ঠানে। 
অনেক আলাপচারিতা হলো
তুমি সেদিন একটু আগে আগেই বাড়ি চলে গেলে। 
আমি দুই সপ্তাহের ছুটিতে
বাংলাদেশে স্বজনদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।  
এমনি একটি সময় হঠাৎ করে
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে দেখলাম 
তুমি অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালের বিছানা নিয়েছো। 
একটু অবাকই হলাম এবং কষ্ট পেলাম খবরটা শুনে।
আজ তোমার এই অকস্মাৎ চলে যাওয়া
আমার কাছে মনে হয় উড়ন্ত এক শান্তির পায়রার
একটি সাদা পালক তার দেহ থেকে খসে পড়লো এই ভূমিতে ।
যখন কোনো সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং জাতীয়
অনুষ্ঠানাদিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতাম
তখন মনে মনে কিছু প্রিয় মুখের সাথে সাক্ষাতের
সম্ভবনা ও প্রত্যাশা আমাকে খুবই পুলকিত করে তুলতো। 
প্রবীর দা তুমিও সেই প্রিয়জনের অন্যতম ছিলে। 
তোমার মনে সামাজিক ও রাজনৈতিক
ব্যাবিচারগুলো সব সময়ই খুবই পীড়া দিতো। 
আর যখনই তোমার সাথে দেখা হতো
তুমি অত্যান্ত মনোবেদনায় সেই কথাগুলোই অনর্গল বলে যেতে। 
যেদিন স্বস্ত্রীক তোমাকে হাসপাতালে দেখতে গেলাম
পলকহীন দৃষ্টিতে শুধুই দেখলাম, কৃতিম যন্ত্রের মাধ্যমে
তোমার শ্বাস প্রশ্বাসের অস্বাভাবিক উঠানামা। 
সত্যিই সেদিন সৃষ্টিকর্তাকে অনেক ব্যাবিচারীই মনে হয়েছে। 
যে মানুষটির সারা দেহ মন জুড়ে মানুষের জন্য মঙ্গল কামনায় ন্যস্ত
আর তাকে এতো চরম কষ্ট পেতে হচ্ছে 
আসলে একেই হয়তো বলে বিধিবাম। 
কিছু কিছু সচেতন মানুষের চোখে
সব সময়ই সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাবিচার ও অনিয়মগুলো ধরা পড়ে। 
আর সেই মানুষগুলো সেই সকল অনিয়মগুলোকে
নিজের বিবেকবোধের কারণে কখনোই মেনে নিতে পারেননা। 
প্রবীর দা; তুমিও ছিলে ঠিক তাই। 
সমাজের সে সব ব্যাধি সমাজেই আজীবন রয়ে যায়
আর বুকে অজস্র্র কষ্ট নিয়ে সেই ভালমানুষগুলোই পৃথিবী থেকে চলে যায়। 
অর্থ বিত্ত দিয়ে দুনিয়ায় ক্ষনিকের বিলাস কামানো যায়
মানুষের মঙ্গল কামনায় যে মন নিবেদিত 
সেই মন ও মানুষটি চিরকালই পৃথিবীতে অবিনশ্বর রয়ে যায়।
তুমি রবে চিরদিন হৃদয়ে সবার; হয়ে এক অনির্বান শিখা
তুমি ছিলে একজন অঙ্কন এবং অলংকরণ শিল্লী
সুন্দর সৃষ্টির কল্পলোকে ছিল তোমার মনোজগৎ। 
তোমার অপূর্ব শিল্প সৃষ্টির কারুকার্যতার  ছোঁয়া
রেখে গেছো তোমার প্রিয় সব মানুষের অন্তরজমিতে। 
এই মানুষগুলো আর এই পৃথিবী যতদিন থাকবে
তোমার অমর কৃর্তি ও সুন্দরতম সৃষ্টিগুলো
ততদিনই বয়ে বেড়াবে সবার অন্তরে অন্তরে। ।
------------------------------------------------------------
ভার্জিনিয়া ইউ এস এ
২২শে নভেম্বর ২০১৬  

Saturday, November 12, 2016

"খিড়কীমারা ঘর"

"খিড়কীমারা ঘর"
মিজানুর ভূঁইয়া



প্রতি বছরই যেতাম ছুটে
দেখবো বলে মা বাবার দ্বারে।
দ্বার খুলে মা আমায় দেখে
তাকিয়ে থাকতেন অবাক দৃষ্টিভরে।
আমিও স্বশ্রদ্ধ মায়ায় জড়িয়ে ধরতাম
অনেক প্রাণের খুশি নিয়ে।
বাবা শুধু হাসতেন মিটিমিটি
প্রবাসী ছেলেকে কাছে পেয়ে।
এমনি করে কতো আনন্দে কেটেছিল
সেই আগের দিনের সময়গুলো।
একরাশ মনউৎফুল্লতা নিয়ে
প্রবাস নিবাসে আসতাম আবার চলে।
এখন আর হয়না যাওয়া তেমনটি করে
মা ও বাবা থাকেন এখন অন্য একটি ঘরে।
নাই যেখানে কোনো প্রবেশ দ্বার
সবুজ বৃক্ষ ও ঘাসের সমারহে আচ্ছাদিত
একটি বাতিবিহীন অন্ধকার ঘর। 
মন মানেনা যাই ছুটে দুই এক বছর পর
আগের মতো মা আর খোলেনা তার দ্বার।
অশ্রুসজল দুই নয়নে
তাকিয়ে থাকি মাটির ঘরটির দিকে।
হয়না দেখা আর আগের মতো
বাড়ে শুধু বুকফাটা কষ্ট আর যন্ত্রনা এই বুকে।
মা ও বাবা শুয়ে আছেন
নীরব নিঃস্তব্ধ খিড়কী মারা ঘরে।
স্বর্গবাসের দুই বাসিন্ধা 
যে খিড়কী আর খুলবেনা সারাজীবনভরে।  
জানি তবুও; যেতে হবে বার বার
দেশ ও মা বাবার মায়ার টানে।
আসবো ফিরে বিফল মনে  
এমনি করে, না দেখার যন্ত্রনা  নিয়ে এই  প্রাণে।।
------------------------------------------------
১২ নভেম্বর ২০১৬
ভার্জিনিয়া ইউ এস এ
 

Wednesday, November 2, 2016

"মা ও চাঁদমুখ"

এসেছ আবার প্রাণঘাতী  নভেম্বর, যে মাসে আমাদের  প্রানপ্রিয়
মা'কে হারিয়েছি ।


আমাদের মায়ের তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে তার স্বরণেঃ- 


"মা ও চাঁদমুখ"
মিজানুর ভূঁইয়া 


সন্ধ্যে হলে তাকাই যখন ঐ পূর্ণিমার চাঁদটির দিকে 
অমনি আমি দেখি মাগো; তোমার আলো ঝলমল মুখচ্ছবি।
তুমি থাকো আলো হয়ে আমার নয়ন পানে
যতক্ষণ ঐ চাঁদ রয় আকাশেতে;
তুমি জ্বলে উঠো আলো হয়ে আমার  হৃদয় গগনে।   
চাঁদটি যখন ডুবে যায়, তুমিও যাও চলে;
হৃদয় আমার কেঁদে উঠে যাওনা তুমি বলে।
হাসতে তুমি চাঁদের মতো; তাই চাঁদে তোমার বাস
চাঁদের দিকে তাকিয়ে পাই একটু আশ্বাস।
ভালবাসায় ভরা  ছিল তোমার হৃদয়খানি
সুখে দুঃখে তোমার মায়া দিতো হাতছানি ।
ঝিনুক যেমন আগলে রাখে দেহখানা শক্ত আবরণে
তেমনি তুমি রাখতে মোদের ঢেকে স্নেহাচ্ছাদনে।
ভালোলাগে জেনে মোদের; চাঁদ হয়ে আছো চাঁদের দেশে
তুমি দুনিয়াময় ছড়াও মুক্তার আলো প্রানখুলে হেঁসে ।। 
********************************
০২ নভেম্বর ২০১৬
ঢাকা, বাংলাদেশ