Wednesday, March 16, 2016

আনন্দ ও বেদনার স্নরণীয় ১৭ই মার্চ



 
 
"আনন্দ ও বেদনার স্নরণীয় ১৭ই মার্চ"
জাতির পিতার জন্ম
জন্মদাতা পিতার  মৃত্যু 

 

১৭ই মার্চ আমার প্রানপ্রিয় পরম শ্রদ্ধেয় পিতা মনিরুদ্দিন ভুঁইয়ার মৃত্যু বার্ষিকী এবং ১৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিন, ৭ই মার্চ বঙ্গুবন্ধু কতৃক আমাদের মহান স্বাধীনতার ঘোষণা যা সমগ্র বাঙ্গালী জাতির ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশনা হিসাবে এসেছিল, আর মার্চ মাসে আমার নিজের জন্মদিন এই চারটি দিবস এমন একটি মাসে অবতীর্ণ যে মাসে মহান বাঙ্গালী জাতি ২৬শে মার্চ গৌরভময় স্বাধীনতা অর্জন করছিল
এই মাসের চারটি দিন ১৭ই মার্চ  বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিন, ৬ই মার্চআমার নিজের জন্মদিন,৭ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস আমার জীবনের যদিও একটি সবচেয়ে গৌরভময় মাস হিসাবে বিগত তিন দশকের কিছু বেশি সময় ধরে অতিবাহিত করে আসছিলাম কিন্তু এই গৌরভময় মাসেরই ১৭ই মার্চ ২০০৪ আমার পরম শ্রদ্ধেয় জন্মদাতা পিতার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মার্চ মাসের সকল অর্জন আর সুখ আমার জীবন থেকে বিসর্জন হয়ে গেছে

আমার জীবনের সবচেয়ে দঃখজন বিষয়টি হলো এই যে; ২০০৪ সালের ঠিক যে মুহুর্তে আমার বাবার মৃত্যু হলো তখন আমি চোখে নতুন মার্কিন স্বপ্ন নিয়ে এই আমেরিকারই জৌলুশপূর্ণ শহরে সেই রাত্রিতে অত্যান্ত আয়েশরা খায়েশে নিদ্রা যাপন করছিলাম রাত্রি ঠিক .৩০ মিঃ দিকে হঠাৎ কানে আওয়াজ এলো ঘরের ফোন বাজছে, ভাবছি এতো রাতে কে আবার কল করছে, একটু জড়সড় হয়ে উঠে গেলাম এই ভেবেই যে; যেইবা করেছে নিশ্চয় কোনো জরুরি ব্যাপার হবে আবার একই সাথে মনে একটু ভয় আতঙ্কও কাজ করছিলো দেশের কথা ভেবে যেই ভাবা ঠিক তাই সত্যি হয়ে গেলফোনের অন্যদিক থেকে আমার বড় বনের ছেলে অর্থাৎ আমার ভাগিনা মুজাম্মেল হুসেইন বাবু (যে কিনা বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া অধিবাসী) চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললোমামা আমাদের নানাজি আর নেই, তিনি এইতো কিছুক্ষণ আগে ইন্তেকাল করেছেন এই কথা শুনার পর আমার মানুষিক অবস্থা প্রচন্ড রকমের খারাপ হয়ে গেল এবং নিজেকে সব কিছু মিলিয়ে খুবই অপরাধী মনে করতে লাগলাম আর ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদা ছাড়া আর তেমন কিছুই করার ছিলনা

এই কথাটি শুনার পর  সাথে সাথে দেশে যাবো তাতো আর হবার নয়, কারণ মাঝখানের দুরত্ব যে সাত সমুদ্র তের নদী; সেটাতো আর বললেই অতিক্রম করতে পারবোনা অবশেষে আমার দেশে যাওয়া হলো একমাস দশ দিন পরএরই নাম হলো"পরদেশের  মেওয়া ফল খাওয়ার স্বাদ"  এভাবেই শুধু জানলাম আমার স্বপ্নের আকাশের দুটি উজ্জল নক্ষত্রের একটি ঝরে গেলো; সে হলো আমার জন্মদাতা পিতা আর দ্বিতীয় নক্ষত্রটি ছিল আমার মা তিনিও হারিয়ে গেলেন  ২০১৩ এর নভেম্বরে এভাবেই আমি ক্রমাগত আলোকহীন জ্যেতিহীন অন্ধকারের অধিবাসী হয়ে পড়লাম নিজের ভগ্নিপতি সহ এমনি আরো অনেককে হারালাম যা নিজের চোখের অন্তরালেই ঘটে গেলো সব কিছু
সেই থেকেই মার্চ মাস আমার জন্য আনন্দের চেয়ে বেদনা মিশ্রিত  একটি মাস হিসাবেই পরিগনাত হচ্ছে; আর এর কারণেই আমি যেমনি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন হিসাবে তার জন্য দোয়া করি এবং একই সাথে আমার বাবার বিদেহী স্মৃতির প্রতি আমার পরম প্রার্থনা পেশ করে আসছি  

আমার নিজের কাছে এটাই জিজ্ঞাস্য যে; আমার নিজের দেশ, পিতা , ভাই বোন, আত্নীয়, নিজ ধর্ম কর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি, স্বাধীনতা, সম্ভাবনা, আলো বাতাস, মাটি, ছেলেবেলার বন্ধুবান্ধব পাড়াপড়শি এসব কিছু ছেড়ে কি অর্জন করার জন্য নিজ দেশ ছেড়ে এই দূর প্রবাসের জীবন বেছে নিলাম? আমারা কি আদৌ এমন মহৎ কিংবা ভালো কিছু অর্জন করছি যে লোভের কারণে জীবনের সকল মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়ে এই পরবাস বেছে নিতে হয়েছে আমি মনে করি আমাদের অর্জনের চেয়েও বিসর্জনের পরিমান অনেক বেশি এবং দেশ মানুষের কাছে আমাদের ঋনের পরিমান অনেক অনেক বেশি 

 
১৬ই মার্চ ২০১৬
ভার্জিনিয়া ইউ এস

No comments:

Post a Comment