Monday, December 30, 2019

"জুটি ভেঙ্গে ছুটি"




"জুটি ভেঙ্গে  ছুটি"
মিজানুর ভূঁইয়া 


শফিক তোর সাথে অনেকদিন আমার কথা হয়নি
দেশেও আমার যাওয়া হয়নি কয়েক বছর হয়েগেছে,
তাই এরিমধ্য অনেক সময় হয়েগেছে তোর সাথে
শেরাটন সোনারগাঁও কিংবা গুলশান ক্লাবে রাতভর
রং তামাশা গল্প গুজব আর যত্রতত্র আড্ডা দেওয়া হয়নি l 
গতকাল হঠাৎ করেই বন্ধু শচীন্দ্রের
একটি টেক্সট মেসেজ পেয়ে কিছুক্ষন একেবারে
নিঃস্বস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, আর নিজের মনের কাছেই
বার বার জিজ্ঞেস করছিলাম একি আসলেই সত্য!
নাকি শচীন্দ্র ভুল করে অন্য কারো কথা লিখতে গিয়ে
ভুলবশত শফিক নামটি লিখে ফেলেছে l 
বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে তৎক্ষণাৎ বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার
শচীন্দ্রকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করতেই 
সে আমাকে নিশ্চিত করলো:
তুই হটাৎ করেই নাকি, না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিস l 
শুনে বুকটা একেবারেই খাঁখাঁ করে উঠলো
মনে প্রচন্ড কষ্ট নিয়েই কাল সারা কেটেছে l 
মুহূর্তে মন ছুটে চলে গেলো শৈশব এবং কৈশোরের 
দুর্দান্ত ছেলেবেলার সেই স্মৃতিভরা দিনগুলোর দিকে l 
পয়ালগাছা হাই স্কুলের বিশাল দুইতলা দালানের
সেই শ্রেণীকক্ষ, যেখানে বসে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে
প্রচন্ড তামাশা আর দুষ্টামি, বিতর্ক প্রতিযোগিতা
গান, খেলার মাঠে দৌড়াদৌড়ি, খেলাধুলা আরো যে কতো কি!
তুই প্রচন্ড মেধাবী ছিলি আর তাই সব সময়ই
ক্লাসে প্রথম হতি, আর দুষ্টমিতেও ছিলি সবার সেরা l 
তার পর আমি উচ্চমাধ্যমিক ক্লাসে পড়ার জন্য 
ঢাকায় চলে আসলাম তোর সাথে দুই বছর পর আবার
দেখা ঢাকায় l তুই আইনের ছাত্র আর আমি ভূগোলের l
আজ ভীষণ মনে পড়ে তুই সূর্যসেন হলে থাকতি
সূর্যসেন হলে রাতদিন কতো সময় কাটিয়েছি
যাকিনা বলে আর শেষ করা যাবেনা,
টি এস সি চত্বর, রমনা পার্ক,বাংলা একাডেমির বই মেলা,
পুরানো ঢাকার হাজির বিরিয়ানি মামা হালিম,
নিউমার্কেট, পাবলিক লাইব্রেরি, শাহবাগ চত্বর, 
নীলক্ষেতের আড্ডা আরো কতো কি;
তুই প্রথম বি সি এস দিয়ে ডিস্ট্রিক জজের
চাকুরী নিলি, অবশেষে সেই চাকুরীতে ইস্তফা
দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের
শিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করলি, সেটাও অবশেষে
ছেড়ে দিলি, কারণ তোর স্বাধীনচেতা মন তোকে
সব সময়ই তাড়িত করতো নিজস্ব স্বকীয়তাবোধকে
ধারণ করে নিজ মনের গতিতে চলতে l
তারপর নিজউদ্বোগে ব্যাবসা শুরু করে গাড়ি বাড়ি
নাম ধাম অনেক কিছুই করেছিস, কিন্তু তবুও 
তোর জীবনের কোথাও যেন কিছু একটা ঘাটতি ছিল,
আর সেই অস্থিরতায় তোকে সদাই  তাড়িত করতো 
বলেই; সব সময় তোর মধ্যে একটা অস্থিরতা দেখতে পেতাম l
একসময় আমি ইচ্ছার বিপরীতে হলেও প্রবাসে চলে আসি l
তুই আমাকে প্রবাসে আসার জন্য যুক্তি দিয়ে কতইনা বুঝিয়েছিলি,
আমি অবশে স্বপরিবারে প্রবাসে চলে আসলাম l
মাঝে মাঝে যখনই দেশে যেতাম তোরা সবাই চারিদিকথেকে
এসে স্বপরিবারে কোনাকোনো রেস্টুরেন্টে আমরা সবাই জড়োহয়ে
অনেক মজা করতাম, তোর সাথে সেই ছোটবেলা থেকে
জীবনের যতটুকু মেলামেশার স্মৃতি ছিল মুহূর্তেই চোখের সামনে
েএকে একে ভাসতে থাকলো আর নিজের কাছে
একেবারেই অবিশ্বাস্য মনে হলো তুই হঠাৎ করেই
আমাদের বাল্যকাল থেকে শুরু হওয়া বিশাল জুটি থেকে
একেবারেই ছুটি নিয়ে না ফেরার দেশে চলেগেছিস l
আমাদের মন যতই বেদনার ভারে দুঃখ ভারাক্রান্ত হউকনাকেন
আমাদের শুভকামনা তোর জন্য সদাসর্বদাই রয়ে যাবে l 
যেখানেই গিয়েছিস, ভালো থাকিস, শান্তিতে থাকিস
বিদায় বন্ধু অনেক অনেক ভালো থাকিস ll

===============================
ইউ এস এ
ডিসেম্বর ৩০ ২০১৯



Thursday, December 26, 2019

"একি তোমার খেলা"

"একি তোমার খেলা"
মিজানুর ভূইয়াঁ

সৃষ্টি যেমন তোমার নিজের হাতে
ধ্বংস লীলা ঘটাও তোমার ইশারাতে।
দিনকে বানাও আলোক প্রদীপ জ্বেলে
আবার রাত করছো আঁধার ঢেলে তাতে।
ইচ্ছে হলেই বৃষ্টি ঢেলে ভিজাও তুমি ধরা
রৌদ্র তাপে তপ্ত করো বানাও আবার খরা।
তুমিই বানাও শখকের পুতুল
আবার তুমিই তাহা ভেঙ্গে করো চুরমুচুর।
তোমার লীলায় তোমার খেলায়
সকল সৃষ্টি শুধুই তোমার হাতের পুতুল।
কষ্ট যতো ধ্বংস যতো সৃষ্ট তাহা পোহায়
সৃষ্টিকর্তা হয়ে তুমি হচ্ছ আবার সবার সহায়।
তুমিই মালিক তুমিই ধনিক
সৃষ্ট যতো সবই হলো গোবেচারা।
তোমার হাতে ভাগ্য সবার
জীবন মৃত্যুর মাঝে সবাই থাকে হয়ে সর্বহারা।
ইচ্ছে হলে রাখো সুখে ইচ্ছে হলে দুঃখে
দয়ার সাগর তুমিই আবার শান্তি ঢালো বুকে।
তোমার চাওয়ায় সুস্থ্য সবাই
আবার ইচ্ছে হলে ভোগাও রোগে শোকে।
সৃষ্টি নামের এমনই রহস্য
কার সাধ্য তোমার এই লীলাখেলা রুখে।
ফুলের বাগান সাজাও তুমি
রং বেরঙ্গের নানান জাতের ফুলে।
তুমিই আবার করছো নিধন
পোকা মাকড় মড়ক বালাই ঢেলে।
তুমিই নাকি রাহিম করিম
সকল সৃষ্টি সবই তোমার নিজ হাতে গড়া।
আবার করছো তুমি সবই নিধন
একি সবই তোমার নিজ মনের খেলা। ।
********************************
ডিসেম্বর ২৬ ২০১৯
ভার্জিনিয়া ইউ এস এ