Monday, April 24, 2017

"আমার বলার কিছুই ছিলনা"


 "আমার বলার কিছুই ছিলনা"
মিজানুর ভূঁইয়া
নীলাঞ্জনা তোমার মুখ দিয়ে মনের ইচ্ছেগুলোকে
কখনোই তুমি প্রকাশ করতে পারতেনা।
তোমার মনের চাওয়া পাওয়ার ইচ্ছেগুলো
তোমার মনের কারাগারেই বন্ধি করে রাখতে।
মনের সকল বাসনাগুলো এমনিভাবেই
লজ্জা কিংবা সংকোচের কারণে অব্যক্তই থেকে যেতো।
আমি অনেক চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হতাম;
অস্পৃশ্য এক যন্ত্রনা আমাকে কুড়ে কুড়ে খেতো।
তোমার সাথে যখনই আমার সাক্ষাৎ হতো;
আমি প্রতিক্ষনই মনের ভেতর অপেক্ষার আলো
জ্বালিয়ে বসে থাকতাম; এই বুঝি কিছু একটা শুনবো বলে।
আমার অপেক্ষার প্রজ্জ্বলমান আলোটুকু জ্বলতে জ্বলতে
এক সময়ে নিভে গিয়ে; আমি অন্ধকারে হারিয়ে যেতাম।
তবুও তোমার মনের সিন্ধুকের বন্ধিদশা থেকে
আমার আকাঙ্খার একটি বাক্যও বেরিয়ে আসতোনা । 
তুমি অনেক কথাই গল্পের মতো করে অনর্গল বলে যেতে
অনেক হাসি তামাশা করতে; আমার অনেক ভালো লাগতো।
তবুও তোমার মুখ থেকে আমি কি যেনো অন্যরকম কিছু একটা
শুনার প্রত্যাশায় বার বার তোমার কাছে ছুটে যেতাম।
এমনিভাবেই জীবনের অনেক সময়ই কেটে গেলো;
তোমার বাবা মা তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিলো
তুমি চলে গেলে শ্বশুরালয়ে, নতুন বরের সাথে ঘর করতে।
সময়ের স্রোত বয়ে বয়ে কয়েকটা বছর কেটে গেলো;
অবশেষে তুমি মনের সিন্ধুকের চাবি খুঁজে পেলে
ফিরে আসলে আমার কাছে, সিন্ধুক উজাড় করে দিবে বলে। 
আমার মনের ভেতর গজিয়ে উঠা সবুজ পাতাগুলো
ততক্ষনে; ঝরা পাতার মতো ঝরে গিয়ে শুকিয়ে নিষ্প্রাণ।
তুমি ব্যর্থ মনোরথে ফিরে গেলে, সেই পথেই
যে পথ তোমাকে আমার কাছে অনেক বিলম্ভে এনেছিল। 
আমার বলার কিছুই ছিলনা-
শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম; তুমি চলে গেলে, তুমি চলে গেলে।
**********************************
২৪ এপ্রিল ২০১৭
ভার্জিনিয়া ইউ এস এ    
  

Saturday, April 1, 2017

"নামবিহীন শিরোনাম"




"নামবিহীন শিরোনাম"

মিজানুর ভূইয়াঁ

এটি একটি চরম সত্য কথা কিন্তু না বললে, না বলাই থেকে যাবে; তাই একটু অপ্রিয় হলেও বলাই সঙ্গত বলে মনে করছি পৃথিবীর সকল লেখক, কবি দার্শনিক, চিন্তাবিদ, গবেষক এবং প্রেমিক পুরুষ আজ অবদি নারীর রূপসৌন্দর্য এবং গুনাগুনের কথা যেভাবে উদারতা দিয়ে বলিষ্ঠভাবে তাদের লেখনীর মাধ্যমে কিংবা স্বয়ং সামনাসামনি প্রকাশ্যেই বলে গেছেন যেখানে নারীকে কখনো চন্দ্র, সূর্য, আকাশের তারার সাথে তুলনা করেছেন; কখনো সাগর, নদী পাখি,প্রজাপতি, ফুল, প্রকৃতি এবং পৃথিবীর যাবতীয় সুন্দর জিনিসের সাথে তুলনা করে নারীকে এতো সুন্দর মহিমান্বিত করে তুলেছেন কিন্তু তাতেও নারী তৃপ্ত নয়! এপর্যন্ত পৃথিবীতে এমন কোনো উদাহরণ বা লেখনী পাওয়া যাবে কি; যেখানে নারী একজন পুরুষ সম্পর্কে এমন উদারভাবে তার সুন্দর্য গুনাগুনের কথা বর্ণনা করে লিখনীর মাধ্যমে কোন কবিতা গানে জীবন্ত করে গেছেন নারী যতটুকুনা নিজেকে সুন্দর করতে পেরেছে, পুরুষ তাকে তার চেয়ে বহুগুন সৌন্দর্যের আলোকে আলোকিত করেছে, তাই নারী এতো আলোকিত এবং মাধুর্যে ভরা নারীর অবয়ব, রূপ মাধুর্যতাকে অবলীলায় কবি সাহিত্যিকগণ তাদের কবিতা গল্প এবং গানে অত্যান্ত জাকঁজমকপূণভাবে রচনা বদ্ধ করেছেন অঙ্কন শিল্পী তার জাদুকরী তুলির ছোঁয়ায় নারীকে এঁকেছেন অপূর্ব দর্শনীয় শিল্পমর্যাদায়; তাতেও নারী নিজ মর্যাদা খুঁজে পায়নি, পায়নি আত্মতৃপ্ততা

পৃথিবীর সকল ভাষায় রচিত যাবতীয় সকল রচনাবলী ঘেটে দেখলে এমন কিছু কি পাওয়া যাবে; যেখানে নারী, পুরুষের যাবতীয় গুনাগুন নিয়ে উদারভাবে কিছু রচনা করেছেন তেমনিভাবে পৃথীবিতে মাকে নিয়ে যত বেশি লেখা হয়েছে এবং মাকে যত কাছের হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে; সেখানে বাবার মহান ত্যাগের কথা ততটা উঠে আসেনি আমি নারী পুরুষকে দুই বিপরীত মেরুতে সামনাসামনি দাঁড় করিয়ে কাউকে ছোট করা বা কাউকে উপরে উঠানোর চেষ্টা করছিনা, শুধু এখানে সত্য উদারতার একটি উদাহরণ টানতে চাচ্ছি এবং যে সত্যিটিকে অদ্যাবদি সত্যিকারভাবে  অনুভূতি দিয়ে খুঁজে নিয়ে এর প্রকৃত মূল্যায়ণ অনুধাবন করে সম্পর্কের গুরুত্বটুকু বুঝার চেষ্টা করা হয়নি বলেই  সম্পর্কের বিষয়টিতে এতো সংশয় খুজে পাওয়া যায়

নারীর মাঝে সুন্দর উদার এবং ত্যাগের যে বলিষ্ঠ ক্ষমতা রয়েছে যা দিয়ে সে পৃথিবীর যাবতীয় অসুন্দরকে সুন্দর করে তোলার মাঝে শান্তির অমিয় ধারায় সুখ সমৃদ্ধির মহাসাগর বানাতে পারে সেই মহান ব্রত আর চেষ্টা একেবারেই আজকাল অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পথে নারী এখন মায়া মমতা আর ভালোবাসার আহবান নিয়ে এগিয়ে আসেনা বরং কোথাও কোথাও চরম প্রতিপক্ষ হিসাবে যুধ্বংদেহীতার সামিল হয়ে অবতীর্ণ হয় এবং প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ মানুষিকতায় চরম সঙ্ঘাতময়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে প্রাচীন মায়াময় স্নেহ মমতা জড়ানো উদার শান্তির পথ ছেড়ে ভিন্নমাত্রার জীবনযাপনের দিকে ক্রমাগতই ধাবিত হচ্ছে আর সে কারণেই সম্পর্কের জটিলতার কারণে ক্রমশই যৌথ পরিবারগুলো আর আগের মিলমহব্বতের জায়গায় থাকছেনা

নারী পুরুষের মধ্যে চারিত্রিক বৈশিষ্টের দিকদিয়ে কিছুটা ভিন্ন হলেও দুজনেরই মধ্যে নিহিত অপার সম্ভাবনাময় প্রতিভা শক্তিকে একটি পারস্পরিক সমন্বিত যৌথ সম্ভাবনাময় পথে নিয়োগ করার মাধ্যমে যে শান্তি এবং অপরূপ সুন্দর্যতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে সেটাই সৃষ্টির আসল সুন্দর্য দৈহিক এবং বাহ্যিক আকৃতিগত বৈষম্যতা যতই থাকুক; মনোজগৎ যদি এক অভিন্ন হয়, তবে সেখানে সুন্দর্য এবং সম্ভাবনাময়তার ফুল ফুটবেই নারীবাদিতা কিংবা পুরুষবাদিতা যাহাই বলিনা কেন; সেটা যদি নিজেদের শিক্ষা, মানসিক বিকাশ ও উন্নয়নের যোগান দানের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে তবে সেটা খুবই প্রশংসনীয়; আর সেটা যদি পরস্পর পরস্পরের বিরুধী মনোভাবাপন্ন হয়ে থাকে; তবে সেখানে সবাইকেই সেই পক্ষবাদীতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে  

প্রকৃত মানবিক চিন্তাধারার আলোকে জীবনকে একটি পরিপূর্ণ এবং গ্রহনযোগ্য পন্থায় ধারণ করার মধ্যে দিয়েই জীবনের আসল মর্যাদাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব এবং জীবনের সকল সুখ সৌন্দর্য সেখানেই নিহিত। আমিত্ববাদের মাঝে সব সময়ই একরকম অহমিকাবোধ এবং প্রতিপক্ষতাবোধ নিহিত থাকে; অপরদিকে আমরা বা সর্বজনীনতাবাদে পরস্পরের সাথে একটি শ্রদ্ধাবোধ, সম্পর্কবোধ এবং দায়িত্ববোধের ব্যাপারটি পরিপূর্ণভাবে জড়িত। তাই নিজেকে সামগ্রিক দায় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিয়ে আমিত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করার মাঝে  তেমন কোনো কৃতিত্ব নেই। জীবনের প্রকৃত বাস্তবতার ভিত্তিতে পারিপার্শ্বিকতাকে দায়িত্ববোধের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে জীবন ধারণ করার মাঝেই জীবনের আসল স্বার্থকতা এবং শান্তি নিহিত।   

*************************************************************************************

৩১ মার্চ ২০১৭

ভার্জিনিয়া, ইউ এস